শিক্ষা সফর এইচএসসি ব্যাচ -২০২৪
❝স্মৃতির সাগরে আলোক জ্বেলে,
রইবে মনের অন্তরালে❞
শিক্ষা সফর-২০২৩
এইচএসসি ব্যাচ -২০২৪
১১ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি. মুরারিচাঁদ কলেজ,
সিলেট এর এইচএসসি-২০২৪ ব্যাচের
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল এ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিক্ষা
সফর যাত্রার শুরুতে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয় প্রফেসর আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ স্যার
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের গুরুত্ব ও ভ্রমনকালীন সতর্কতা জানিয়ে যাত্রার অনুমতি
দেন। এ সময় শিক্ষার্থী শিক্ষক ও অভিভাবক মিলে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অধ্যক্ষ
স্যারের নির্দেশমত বাসের দায়িত্বশীল সবাইকে নির্ধারিত আসনে বসান। ৬ জন শিক্ষক ও
দুইশত শিক্ষার্থী নিয়ে ৫ টি বাসযোগে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যাত্রা শুরু হয়।
এইচএসসি
ব্যাচ ২০২৪ ব্যাচের সাথে সফর সংঙ্গী ছিলেন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, উদ্ভিদবিদ্যা
বিভাগ, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক,
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ফৌজিয়া আজিজ, সহযোগী
অধ্যাপক অর্থনীতি বিভাগ, মোহাম্মদ বিলাল উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, শেখ মোঃ নজরুল
ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক বাংলা বিভাগ, অঞ্জনা রাণী দে সহকারী অধ্যাপক বাংলা বিভাগ।
৫টি
বাসের দায়িত্বশীল শিক্ষার্থী ছিল
১ম
বাস:(ছেলে) মহসিন মালিক, রাফসান জানি, আহমেদ ফিদা হোসেন ফারহান সাদিক খান
২য় বাস:( ছেলে) মোস্তফা গালিব নেহাল বিপ্রজীত দেব রায় সৌম্যদ্বীপ রায় রাহিক সিদ্দিকী
৩য় বাস (ছেলে) শাহরিয়ার আহমেদ নাঈফ আহসান জামিল রাইয়ান প্রতীক রায় রুহিত
পাল রাজেশ
৪র্থ বাস(মেয়ে) সাবিহা মাহবুব টুসি , লেইকন সিনহা, অনন্যা সূত্রধর
৫ম বাস:(মেয়ে) জান্নাতুল ফেরদৌস ত্বোয়া, রিজওয়ানা সায়মা,
তাহুরা আক্তার তাকি।
বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতাটির পঙক্তিগুলোর মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল পোর্টাল “চা বাগান দেখা শেষ হয়ে গেলে
আপনি চলে যেতে পারেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যেখানে উঁচু নিচু পাহাড়ের গায়ে সারি
বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার প্রজাপতির লাখ লাখ বৃক্ষ । ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ
করা মাত্রই আপনি দেখবেন চারিদিকে হাল্কা অন্ধকার রাস্তায় দুপাশের বৃক্ষগুলো
দিবাকরের আলোক রশ্মিকে আটকে রেখেছে , মাঝে মাঝে বৃক্ষসারির
মগডালে চোখ রাখুন দেখবেন বানর আর হনুমান লাফালাফি করছে । এতটু ভেতরে প্রবেশ করলে
আপনার চোখে পড়বে খাটাস , বনমোরগ , উল্লুক
, মেছোবাঘ বন বিড়ালসহ বিভিন্ন জীবজন্তু আর পার্কের বিশাল
বিশাল বৃক্ষরাজি,জীবজন্তুর হুঙ্কার, ঝিঁঝিঁ
পোকার শব্দ, বানরের লাফালাফি, ঝাঁকঝাঁক
উল্লুকের ডাকাডাকি একটু সময়ের জন্য হলেও আপনার ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে মনে
এনে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া । এমনিতে দিনদিন বাংলাদেশের মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সীমিত
হয়ে পড়ছে দেশের স্থল ভূমি আর তার সঙ্গে ধ্বংশ হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ।এদিকে
মানুষের জীবন যাত্রা ক্রমশ হয়ে উঠছে নগরকেন্দ্রিক। কিন্তু যে হারে প্রকৃতি ধ্বংশ
হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে মানুষের চাহিদা বাড়ছে অরণ্যের দূষন মুক্ত অক্সিজেন
গ্রহনের জন্য। প্রতিদিন ধ্বংশ হচ্ছে আমাদের শস্যশ্যামল বাংলার প্রকৃতি। বৃদ্ধি
পাচ্ছে শহরের ব্যস্ত জীবন কিন্তু শহরের ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে এখনও মানুষ পেতে চায়
শ্যামল অভয়ারণ্যের ছোঁয়া কিংবা একটু নিস্ত ব্ধতার একাকিত্ব। আপনার এই চাহিদা পূরণ
করতে দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র ‘লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে
বেড়ানো যতার্থ হবে।
প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে লাউয়াছড়া পার্কের ভেতর আড়াই হাজারেরও অধিক প্রজাতির
পাখি যার মধ্যে একাধিক প্রাণীর অস্থিত্ব দেশের অনান্য বনে প্রায় বিলুপ্ত। এছাড়াও
১০ প্রজাতির সরিসৃপ, বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, বানর, সিভিট কেটসহ অর্ধশত প্রজাতির জীবজন্তু রয়েছে। এর ভিতরে
রয়েছে কয়েকটি খাসিয়া পুঞ্জি, পার্কের পাহাড় বিস্তৃত লম্বা বৃক্ষে খাসিয়ারা খাসিয়া পানের
চাষ করে। পার্কের এক পাশে রয়েছে আনারসের বাগান, এক পাশে চায়ের বাগান আবার কোথায়
রয়েছে লেবুর বাগান। জঙ্গলের ভিতর রয়েছে কয়েকটি পাহাড়ি ছড়া। পুরো ন্যাশনাল পার্কটি
শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ পাকা মহাসড়ক ও সিলেট আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের রেললাইন দ্বারা ৩
খন্ডে বিভক্ত। কিন্তু রেললাইন ও পাকা সড়ক দ্বারা বিভক্ত হলে ও পার্কের ভিতর তেমন
কোনো বাড়ি-ঘর না থাকায় ও ঘন জঙ্গলের কারণে একাকিত্বের তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
লাউয়াছড়ায় এক ধরেণের পোকা রয়েছে, যার শব্দ শোনার পর আপনার আচমকাই বা হঠাৎ করেই যেন আপনার
ভালো লাগতে শুরু করবে। মনে হবে যেন আপনি অন্য কোনো পৃথিবীতে পা দিয়েছেন। ভর দুপুরে
কিংবা সকাল বেলা লাউয়াছড়ার প্রাকৃতিক শব্দ শুনে মনে হবে আপনি নিশি রাতে কোন
নিস্তব্দ স্থানে দাড়িয়ে আছেন।
এই পোকার শব্দকে ‘ফরেস্ট মিউজিক’ বলে
আখ্যায়িত করেছেন পার্কের ট্যুরিস্টর। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে ছিল
বিরল প্রজাতির এক বৃক্ষ। সেই বৃক্ষটিকে নিয়ে নানা জনের ছিল নানা
কৌতুহল। এক সময় এই বৃক্ষের গায়ে লেখা ছিল
‘ক্লোরোফম’। দীর্ঘদিন এই নাম থাকায়
দেশবাসী এটিকে ‘ক্লোরোফম’ বলেই জানেন। হঠাৎ করে এ গা থেকে ক্লোরোফম সাইড বোর্ডটি
নামিয়ে এর গায়ে টাঙ্গানো হয় ‘ আফ্রিকান অক ট্রি ’ এর পর এই নেম প্লেটটিও নামিয়ে
লেখা হয় ‘ একটি বিরল প্রজাতির বৃক্ষ’ লোকমুখে প্রচারিত রয়েছে এই বৃক্ষটি কোটি টাকা
মূল্যের। এটি নাকি একবার বিমান আটকিয়েছিল। এর পাতার গন্ধ শুনলে নাকি মানুষ অজ্ঞান
হয়ে যেতো। তবে বন বিভাগের কাছ থেকে এরকম কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। একটি সূত্রে
জানা যায়, এ প্রজাতির বৃক্ষ বিরল। বাংলাদেশে এ প্রজাতির গাছ আর কোথাও নেই। যাহোক
নানাভাবে এর খবর ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ এই বিরল প্রজাতির বৃক্ষটিকে প্রধান উদ্দেশ্যকরে
লাউয়াছড়া যায়। বৃক্ষটি পার্কের ফরেস্ট রেস্ট হাউজের পাশে অবস্থিত। তবে দুঃখ জনক
হলেও সত্য গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সাপ্তাহে এক ঝড়ে গাছটি উপরে পরে যায়।
বর্তমানে গাছটির মুল থেকে ৫ফুট অংশ স্ব স্থানে পুঁতে রেখে চারপাশে কাঁটা
তারের বেড়া ঘিরে রাখা হয়েছে এবং বাকী অংশ পাশে স্ত্তপাকারে রাখাহয়েছে।যাকে ঘিরে
এখনও পর্যটকদের ভীর জমে। তবে লাউয়াছড়ার প্রাণ বৃক্ষ দেশের একমাত্র আবিস্কৃত এই
বৃক্ষটি যখন ঝড়ে উপরে পড়ে তখন বন বিভাগ জানতে পারে এটি ক্লোফোরা এক্সেলসা এবং
সৌভাগ্য বশত ক্ষুদ লাউয়াছড়ায়ই আবিস্কার হয় আরও একটি ক্লোফোরা এক্সেলসা। এর
অবস্থান লাউয়াছড়া বিট অফিসের পাশে।“
পথে যেতে শিক্ষার্থীদের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও বাসের ভিতরের আনন্দ ছিল অসাধারণ।
আল্লাহ সিলেট, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক দৃশ্য নিজ হাতে সাজিয়েছেন। রাস্তার পাশে সারি সারি সজীব গাছ মনে হচ্ছে বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে।
পাহাড় নদী ও গাছের সারি রাস্তাকে করেছে অপরূপ। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে মৌলভীবাজারের
রাস্তা বৃক্ষরাজির মাধ্যমে মনোমুগ্ধকরভাবে সাজানো হয়েছে। এ রাস্তা ভ্রমন পিপাসুদের
মন হরণ করে নেয়। প্রকৃতি এখানেই মহীয়ান যা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। শিক্ষার্থীদের বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মত।
মনে হয়েছে শহুরে বন্দীজীবন থেকে মুক্ত নিহঙ্গের স্বাদ পেয়েছে। গাছে উঠা, চশমা পড়া বানর, হনুমান, উল্লুক, বন বিড়াল ও
মোরগের খোঁজে ওরা অভিযানে এসেছে। খাসিয়াপুঞ্জী ও লোকালয়ে প্রবেশ করে তাদের
জীবনাচার ও কথোপকথনে মনে হয়েছে প্রগাঢ় আত্মীয়তার সম্পর্কের মিলন ঘটেছে।
পাহাড়ীজনপদের লোকাচার ভিন্ন হলেও সবাই এক ও অভিন্ন স্বদেশী প্রেমে মুগ্ধ।
শিক্ষার্থীদের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখবে। শিক্ষার্থীরা আগামী জীবনে দেশ
মাতৃকার কল্যাণে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে এই প্রত্যাশা।
ক্ষুদে মুরারিয়ানদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা। মুরারিচাঁদ কলেজের গৌরবময় ইতিহাসে এই
দিনটিও যুক্ত হলো।
শেখ মোঃ নজরুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক বাংলা বিভাগ,
মুরারিচাঁদ কলেজ
সিলেট।