"Never Stop Learingin" শিক্ষা কখনো থেমে থাকেনা ।
" Never stop Learning" শিক্ষা কখনো থেমে থাকে না।
এম. সি. কলেজ সিলেটের স্বনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ক্লাস ও পরীক্ষায় আসে এবং চলে যায়। বিশাল এ বিচিত্র কর্মযজ্ঞ। হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী হৃদয়ে দাগ কাটতে পারে।
জীবনের এ অভিজ্ঞতা শুনলে অনেকেরই ভাল লাগতে পারে।
বর্তমান বাংলা বিভাগের অবস্থান একাডেমিক ভবন ৪র্থ ও ৫ম তলা। ক্যাম্পাসের শেষ প্রান্তে। সবুজ বনানী, কাজল দীঘি, পদার্থ ও রসায়নের গোল চত্বর পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। আমি একাডেমিক ভবন ৫০১ নং রুমে দায়িত্ব পালন করছি। পরীক্ষা শুরুর ৩/৪ মিনিট পর দুই জন পরীক্ষার্থী একজন আরেজনকে নিয়ে প্রবেশ করে। আমি দেখতে পেলাম একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর নাম কয়েস। সে মদনমোহন কলেজে দর্শন বিভাগে ২য় বর্ষে পড়ে। সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শুনে শুনে শিখে আজ এপর্যায়ে এসেছে। জিজ্ঞাসায় জানতে পারলাম ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে সে শিখে।
(ব্রেইল পদ্ধতিঃ কাগজের ওপর ছয়টি বিন্দুকে ফুটিয়ে তুলে লিখবার একটি পদ্ধতি। দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা এই উন্নীত বা উত্তল বিন্দুগুলোর ওপর আঙ্গুল বুলিয়ে ছয়টি বিন্দুর নকশা অনুযায়ী কোনটি কোন্ অক্ষর তা’ অনুধাবন করতে সক্ষম হয় এবং লেখার অর্থ বুঝতে পারে। ছয়টি বিন্দুর কোনোটিকে উন্নত করে আর কোনোটিকে উন্নত না-করে ৬৩টি নকশা তৈরী করা যায়। এক-একটি নকশা দিয়ে এক-একটি অক্ষর, সংখ্যা বা যতিচিহ্ন বোঝানো হয়। ৬টি বিন্দু বাম ও ডান দুটি উল্লম্ব স্তম্ভে সজ্জিত থাকে। অর্থাৎ প্রতি আনুভূমিক সরিতে থাকে দুটি বিন্দু। বিন্দুগুলোর পরস্পরের আকার ও অন্তর্তী দূরত্ব থাকে অভিন্ন। যেমন, যদি কেবল বাম স্তম্ভের ওপরের বিন্দুটি উত্তল থাকে আর বাকী ৫টি থাকে সমতল, তবে এ নকশাটি দ্বারা ইংরেজি বর্ণমালার a অক্ষর বোঝায়। রন্ধ্রযুুক্ত ধাতব পাত ব্যবহার করের সাহায্যে হাতে বিশেষ ধরনের কাগজের ওপর ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা যায়। বিকল্পে একটি বিশেষায়িত টাইপরাইটার ব্যবহার করা হয়।)কয়েসের বাবা একজন কৃষক। ওরা ৩ ভাই বোন সে বড়। মায়ের নাম আমিনা বেগম, বাবা সাবাদ আলী গ্রাম আসামপুর পোস্ট অফিস পাগলা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ।
কয়েসকে দেখলেই মনে হয় দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কথা বললে সে খুব স্পষ্ট কথা বলে। চমৎকার ভাবে কথা বলতে পারে। অন্ধত্ব পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। কয়েসের শ্রুতিলেখক বাসুদেব ভট্টাচার্য। বাসুদেব কয়েসের সাবেক সতীর্থ, মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
কয়েসের অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষায় বাসুদেব শ্রুতি লেখক হিসেবে পরীক্ষা দিয়েছে।
আমরা দেখতে পাই সামান্য কারণে অনেক শিক্ষার্থী পড়া বন্ধ করে দেয়। শত প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেও কয়েস জ্ঞান আহরণে এগিয়ে যাচ্ছে।
কথা প্রসঙ্গে জানা যায়, MP3 শুনে কয়েস ৯ বছরে কোরআনে হাফিজ হয়েছে। কোরআন শরীফের পরীক্ষা সে যে কোন সময় দিতে আগ্রহী। তাঁর কোরাআন শরিফ হিফজের শিক্ষক শেখ সাদ আল গান্ধী, দাম্মাম সৌদি আরব। সে আশাবাদী তার শিক্ষক সাদের সাথে দেখা হবে। কয়েস উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে খুবই আগ্রহী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কয়েস আমাদের সবার দোয়া প্রার্থী। শিক্ষা দার্শনিকের মতে শিক্ষা কখনো থেমে থাকেনা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কয়েস প্রমান করে দিল ইচ্ছা থাকলে জ্ঞান অর্জন সম্ভব ।